আজ টানা চতুর্থদিনের মতো বাংলার ছাত্র সমাজ নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। রাজধানী ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দর সড়কে গত ২৯ জুলাই রবিবার জাবালে নূর পরিবহণের একটি বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেয় নিহত হয় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী, দিয়া খানম মিম ও অপর জন হচ্ছে আবদুল করিম রাজীব। মূলত এই প্রেক্ষাপটকেই কেন্দ্র করে প্রথমে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পড়া অবস্থাতেই রাজপথে আন্দোলনে নামে পরে তা আস্তে আস্তে পুরো রাজধানীর সকল স্কুল, কলেজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একগ্রতা প্রকাশ করে রাজপথে আন্দোলন অংশগ্রহণ করে।

বাংলাদেশে ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে সড়ক পথে যাত্রী হয়রানি, তারই ধারাবহিকতায় বাড়ছে সড়কের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সংখ্যা। সাম্প্রতিক কিছু সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান রাজীব নামের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী যার হাত কাটা পড়ে দুই বাসের দরজার ধাক্কায়,তার পর একে একে চলে গেল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইদুর রহমান পায়েল এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালো দিয়া ও করিম। দেশে যখন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণে ছাত্র সমাজ সারা দেশে বিক্ষোভ করছে সেই সময় রাজধানীতে বিক্ষোভরত অবস্থায় এক ট্রাক ড্রাইভার চাপা দেয় এক শিক্ষার্থীকে, আরো শোনা যায় পরের দিন কুমিল্লায় বাস চাপায় ৫জন নিহত হয়েছে।

নিয়মিত অস্বাভাবিকভাবে সড়কের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জনমনে এখন প্রশ্ন ওঠেছে এর মূল কারণ আসলে কি হতে পারে, সেই প্রশ্ন খুঁজতে সাংবাদিকগণ বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় নৌ ও পরিবহন মন্ত্রী শাজাহন খানের নিকট সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সাংবাদিকগণ মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে জানতে চান বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার প্রাসঙ্গিক বিষয় ও আসামিদের বিচার এবং সড়ক দুর্ঘটনার পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ের ওপর ওনার নিজস্ব মতামত। মন্ত্রী মহোদয় প্রশ্নের জবাবে প্রথমে হাস্যজ্বল চেহরায় তার নিজস্ব মতামত তুলে ধরে বলেন, দেশে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার মূল কারণ হলো জনসচেতনার অভাব এবং ড্রাইভারদের বিচার প্রসঙ্গে বর্তমান আইনের বিচার আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন।

মাননীয় মন্ত্রী মহাদয়ের কথার সাথে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বিরোধ করে মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে সেই সাথে “নিরাপদ সড়কের দাবিতে” ৯ দভা দাবি উপস্থাপন করে । সেই দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং নৌ ও পরিবহন মন্ত্রী শাজাহন পরিবহণ মালিক-শ্রমিক সমিতির সভাপতিসহ আরো উচ্চ পদস্থ ব্যাক্তিবর্গরা মিলে একটি জরুরী বৈঠকের ডাক দেন । সেই বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিক্ষার্থীদের যুক্তিসঙ্গত সকল দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন সড়কে প্রতিটি যানবাহনের বডিফিটনেস, ড্রাইভারদের বৈধ লাইসেন্স প্রতিটি টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়ার শুরু আগে প্রশাসন হতে চেক করা হবে এবং আসামীদের কঠোর শাস্তির বিধানসহ বর্তমান আইনের শাস্তির বিধানের সংস্কার চেয়ে পরবর্তী অধিবেশনে সকল বিষয় উপস্থান করা হবে।

কিন্তু এতেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আশ্বস্ত হতে পারেনি। তারা দাবি করে যত দ্রুত সম্ভব আইনের খসড়া অনুমোদন সহ বাস্তবে কার্যক্রমের প্রমাণ তাছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন বন্ধ না রাখার দাবি করে। তারা সারা দেশে “নিরাপদ সড়কের দাবিতে” আন্দোলন চালিয়ে যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু স্থানে পুলিশ বাধাঁ সৃষ্টি ও লাঠি চার্জ করেছে এরকম ঘটনা শোনা যায়। কমোলমতি শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খল আন্দোলনে পুলিশের এরকম আচরণে জাতির বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শোনা যায় । যা পরবর্তীতে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সারা দেশের সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীগণসহ সাধারণ জনগণ একাগ্রতা জানিয়ে সকল জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।পরিবহন মালিক সমিতি থেকে দূর পাল্লার বাস নিরাপত্তার কারণ দেখিয়েছে যাত্রা বন্ধ রেখেছে। এদিকে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে জড়ো হয়ে সড়কে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা । বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে সেখানে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে বিভিন্ন সুকল কলেজের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী মোড়টিতে অবস্থান নেয়। ব্যারিকেড দিয়ে শাহবাগে ঢোকার প্রতিটি মোড়ে একটি করে লেন তৈরি করেছে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। ওই মোড়ের চেক পয়েন্টে দাঁড়িয়ে একেকটি গ্রুপ আকারে চলছে সকল ধরনের পরিবহনের ফিটনেস এবং লাইসেন্স চেক।যেসকল পরিবহন চালকের বৈধ লাইসেন্স সঙ্গে রয়েছে সেই গাড়িগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু যেসব চালকদের বৈধ লাইসেন্স নেই তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। এ সময় বর্ড়ারগার্ড বাংলাদেশে বিজিবি দুইটি গাড়িও আটকায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে লাইসেন্স মেয়াদহীন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নিজবর রহমানের গাড়ির চালকের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়।

এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ্য পয়েন্টে ও মোড়ে প্রতিটি সড়কে দেখা যায় একি চিত্র শিক্ষার্থীরা রাজধানীর সবচেয়ে বিশৃঙ্খল রিকশা পরিবহণকে দেখা যায় সারিবদ্ধ ভাবে এক লাইনে পরিচালনা করছে কোন রিকশা অপর রিকশাকে অভারটেক করার সুযোগ নেই এরক সুশৃঙ্খলপূর্ণ্য রিকশার সারিবদ্ধ যাত্রা রাজধানীবাসী কখনোই দেখেনি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় পুলিশের গাড়ি সহ বিভিন্ন সাধারণ পরিবহণ যেমন প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল,সিএনজি,ট্রাক-বাসের বিরুদ্দে পুলিশের সাহয্য নিয়ে মামলা করে এবং সেইসব পরিবহণ গুলোকে আটক ও ফেরত পাঠাই। রাজধানীবাসী কিছুটা পরিবহণ ঝামেলা পড়লেও বেশ উপভোগ করেছে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের কর্মকান্ড। সবাইকে অবাক করে জাতির আগামী দিনের সম্পদ আজকের কোমিলমতি শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের চোখে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ইচ্ছা থাকল সবই সম্ভব।রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলা শহরে শিক্ষার্থীরআ একই দাবিতে আন্দোলন করেছে।
আমাদের সাথে যুক্ত হতে চাইলৈ : ফেসবুক পেইজ | | ফেসবুক গ্রুপ