আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, প্রাইজবন্ড কি ? প্রাইজবন্ডের কি কাজ? কিভাবে ও কোথা থেকে প্রাইজবন্ড ক্রয় ও বিক্রয় করা যায় ? প্রাইজবন্ডের কি কি পুরষ্কার ও পুরষ্কার জেতার উপায় ? Bangladesh Prize Bond Information প্রাইজবন্ড নামটি শুনলে সাধারণভাবে সহজেই ধারণা করে নেওয়া যায় যে এর সাথে জড়িয়ে আছে “অর্থ” সম্পর্কিত কোন বিষয়। Prize Bond BD। যদি আপনি এমনটি মনে মনে ভেবে থাকেন তাহলে আপনার ধারণা একদম সঠিক। যারা অর্থের ব্যাপারে একটু সচেতন ও মিতব্যয়ী তারা সম্ভোবত অনেক আগে থেকেই প্রাইজবন্ডের সাথে পুরোপুরি জড়িত আছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই থাকতে পারেন যারা “প্রাইজবন্ড” সম্পর্কে আংশিক বা একেবারেই নতুন ধারণা নিতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এই পোষ্ট “প্রাইজবন্ড” সম্পর্কে চমৎকার ও আপডেট তথ্য দেওয়ার চেষ্ঠা করবে মাত্র। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রাইজবন্ড সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য |
প্রাইজবন্ড সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য
বাংলাদেশ সরকার সকল শ্রেণী ও পেশাজীবি মানুষকে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে “জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর” কর্তৃক একটি ব্যতীক্রমধর্মী কাগজের মুদ্রার মূল্যমান পদ্ধতি চালু করে যার নামকরণ করা হয় “প্রাইজবন্ড” । বাংলাদেশে প্রথম প্রাইজবন্ড চালু হয় ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ ব্যাংক হতে প্রাইজবন্ডের মুল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় । প্রাইজবন্ডকে কেউ কেউ লটারিবন্ড নামেও পরিচিত করেন। সাধারণ ভাবে আমরা লটারি বলতে একটি নিদির্ষ্ট অর্থ খরচ করে ভাগ্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাকে বুঝি যেখানে নিদির্ষ্ট অর্থের ফেরত পাওয়ার কোন সম্ভবনা থাকে না। কিন্তু প্রাইজবন্ড নির্দিষ্ট স্থান থেকে ক্রয়-ভাঙ্গানোর মাধ্যমে সমপরিমাণ অর্থ ফেরত পাওয়া যায় বলে এটি একটি ঝুঁকিমুক্ত “ভাগ্য পরীক্ষা” পদ্ধতি নামেও পরিচিত। যেখানে আপনি প্রাইজবন্ডের মূল্যমান অর্থ ফেরত সহ “ভাগ্য-পরীক্ষায়” নির্বাচিত হলে এর বিপরীতে একটি আকর্ষণীয় পরিমাণ অর্থ পুরষ্কার হিসেবে পেতে পারেন।
প্রাইজবন্ডের প্রাচীন ইতিহাস
পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ১৯৫৬ সালে “প্রাইজবন্ড” পদ্ধতি চালু হয় আয়ারল্যান্ডে এবং ঠিক পরের বছর যুক্তরাজ্য সরকার সেদেশেের “অর্থ মন্ত্রণালয়ের” মাধ্যমে প্রাইজবন্ডকে পরিচিত করে “প্রিমিয়ামবন্ড” নামে। বাংলাদেশ সরকার সকল শ্রেণী ও পেশাজীবি মানুষকে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে “জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর” কর্তৃক প্রথম প্রাইজবন্ড চালু হয় ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১০ “দশ” ও ৫০ “পঞ্চাশ” টাকা মুল্য মানের প্রাইজবন্ড চালু করা হয়েছিল যা পরে তুলে নেওয়া হয় । এবং ১৯৯৫ সালে ১০০ “একশত” টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু হয় যা বর্তমানেও প্রচলিত রয়েছে।
ফ্রীতে অনলাইনের মাধ্যমে প্রাইজবন্ড চেক অথবা ক্রয় করুন
বাংলাদেশের প্রাইজবন্ডের কার্য-পদ্ধতি
সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়। প্রাইজবন্ড বিক্রি করে সরকার সরাসরি জনগণের কাছ থেকে ঋণ নেয় এবং তা ক্রয় করে সরকার সে ঋণ পরিশোধ করে থাকে যার যাবতীয় কাজ তত্ত্বাবধান করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশে বসবাসরত ১৮ উর্দ্ধ বয়সের যে কোন নাগরিক বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল ক্যাশ অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে “প্রাইজবন্ড” ক্রয় ও ভাঙ্গিয়ে সমমূল্যমান অর্থ ফেরত নিতে পারেন। প্রাইজবন্ডের অবৈধ ব্যবহার ও ব্যক্তিগত ক্রয়-বিক্রয় আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। একজন সাধারণ ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা সমমূল্যের প্রাইজবন্ড ক্রয় করতে পারেন। বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড ড্র কমিটির সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো: পাটোয়ারীর ভাষ্য মতে দেশে বর্তমানে ৪ কোটি ৪০ লাখ পিস প্রাইজবন্ড রয়েছে ।
বাংলাদেশ প্রাইজবন্ডের ড্র এর সর্বশেষ আপডেট দেখুন
বাংলাদেশের প্রাইজবন্ডের পুরষ্কার সমূহ
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাইজবন্ড সিরিজের সর্বমোট ৪৬ টি পুরষ্কারের ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। যার মোট অর্থের পরিমাণ হয় ১৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা মাত্র। যদি কোন ব্যক্তি প্রাইজবন্ড বিজযী হয় তাহলে তাকে সরকারের নির্ধারিত আবেদন ফরমে সাথে নির্বাচিত প্রাইজবন্ডসহ আবেদন করলে সর্বোচ্চ ২ মাসের মধ্যে নির্ধারিত পুরষ্কারের অর্থ তার ঠিকানায় পে-অর্ডার মাধ্যমে পাঠানো হয়। প্রাইজবন্ড ড্র করার ২ বছর পর্যন্ত প্রাইজবন্ডের পুরষ্কারের অর্থ দাবি করার সময় থাকে। কিন্তু উক্ত সময় (২ বছর) অতিবাহিত হওয়ার পর যদি প্রাইজবন্ডের অর্থ বিজয়ী কোন ব্যক্তি ওই অর্থের দাবি না করে বা দাবিদার না পাওয়া যায় তাহলে সেই অর্থ তামাদি হয়ে সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে যায়।প্রাইজবন্ডের পুরষ্কারের অর্থ করমুক্ত নয় তাই আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৫৫ ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই থেকে এ অর্থের ওপর সরকার প্রদত্ত ২০ শতাংশ কর প্রদান করতে হয়।
বাংলাদেশে প্রাইজবন্ডের পুরষ্কার সমূহ :
- প্রথম পুরষ্কার – ৭৫টি – ৬ লাখ টাকা মাত্র।
- দ্বিতৃীয় পুরষ্কার – ৭৫টি – ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা মাত্র।
- তৃতীয় পুরষ্কার – ১৫০টি – ১ লাখ টাকা প্রতি জন মা্ত্র।
- চতুর্থ পুরষ্কার – ১৫০টি – ৫০ হাজার টাকা প্রতি জন।
- পঞ্চম পুরষ্কার – ৩০০০টি – ১০ হাজার টাকা প্রতি জন।
বাংলাদেশের প্রাইজবন্ডের ড্র পদ্ধতি
বাংলাদেশে প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে পরিষদের চেয়াম্যান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির মাধ্যমে প্রতিবছরে সর্বমোট ৪ চার বার প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য তারিখগুলো ক্রমান্বয়ে : ক) ৩১ জানুয়ারি খ) ৩০ এপ্রিল গ) ৩১ জুলাই ঘ) ৩১ অক্টোবর । তবে উক্ত তারিখগুলোর মধ্যে কোন সাপ্তাহিক ছুটি , সরকারি ছুটি অথবা অন্য যে কোন কারণে ড্র অনুষ্ঠিত না হলে তা পরের কার্য দিবসে ড্র অনুষ্ঠিত হয়। প্রাইজবন্ডের প্রতিবার ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের জনপ্রিয় বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো তা নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে থাকে।
আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন : ফেসবুক পেইজ | | ফেসবুক গ্রুপ
0 মন্তব্য সমূহ: